শূন্য থেকে শুন্যে উড়ার স্বপ্ন

২০১১ সালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি.এস.সি এবং এম.এস.সি শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি সফটওয়্যার সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।  আড়াই বছর চাকরি করার পর  আমাকে ডিজিটাল মার্কেটিং টিম লিড দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হুট করে ।  এর আগে মার্কেটিং টিমটা পুরাটাই ইন্ডিয়া থেকে পরিচালনা করা হতো । এবং আমিই প্রথম বাংলাদেশ থেকে লোকবল নিয়ে টিমটা তৈরী করি । সফলতার সাথে ১ বছর দায়িত্ব পালন করার পর আমাকে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট-এর হেড করা হয় ।

এখানে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য বাংলাদেশে ২০১৫ সালের দিকে তেমন কোনো জনশক্তি পাওয়া যাচ্ছে না । তখন থেকেই আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে কিভাবে আমাদের দেশ সহ  বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এত বড় ইন্ডাস্ট্রির জন্য দক্ষ জনবল তৈরী করা যারা আমাদের দেশের চাহিদা পূরণ করে বিশ্ব মার্কেটে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখবে ।

প্রাইভেট চাকরির পাশাপাশি একটা বিজিনেস শুরু করা খুব একটা সহজ ছিল না । তাছাড়া যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম ওদের একটা নিয়ম ছিল চাকরির পাশাপাশি বাইরে কিছু করা যাবে না । তাছাড়া খুব কম সময়ে ডিপার্টমেন্ট হেড হয়ে যাওয়ার কারণে এক ধরণের মানসিক প্রেসারে থাকতে হতো । কর্পোরেটে এই বিষয় গুলো খুবই বেদনাদায়ক । এক পর্যায়ে ভাবলাম চাকরি ছেড়ে দিবো এবং কর্পোরেট পলিটিক্স-এর কারণে আসলে চাকরি ছেড়ে দিতেই হলো । চাকরি ছেড়ে আসার সময় এক মাসের অতিরিক্ত স্যালারি ছাড়া আর কিছুই পেলাম না । তখন আমার স্বপ্নটা আরও প্রবল হলো এবং মনে হলো গুলিস্থানের মোড়ে যদি একটা পানের দোকানও হয় তাও সেটা যেন আমার নিজের হয় ।

গ্রামের মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, সমাজ-সংসার এবং সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে হিসেবে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুলটাইম বিজিনেসে নামতে পারলাম না । তাই আরেকটা ছোট প্রতিঠানে চাকরি নিলাম আগে যা স্যালারি পেতাম তার থেকে অর্ধেক স্যালারিতে যদিও এর থেকেও অনেক বড় অফার ছিল । শুধু চাকরির পাশাপাশি বিজিনেস শুরু করবে বলে এই কম বেতনেই জয়েন করলাম ।

শুরু করলাম Skilluper, ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে সাথে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে ফ্রিল্যান্সিং। বেতন এবং ফ্রিল্যান্সিং মিলে যে টাকা উপার্জন করি সংসার চালায় এবং কোম্পানির মার্কেটিং শুরু করি । একটু বলা রাখা দরকার Skilluper হলো বাংলাদেশের একমাত্র ই-লার্নিং প্যাটফর্ম যেখানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অ্যাডভান্সড বিষয় গুলো শেখানো হয় যাতে এখান থেকে শিখে ছাত্ররা বিশ্ব বাজার লিড দিতে পারে ।

প্রথম ব্যাচে ৯ জন দিয়ে যাত্রা শুরু হলো Skilluper-এর বণিক কো-ওয়ার্কিং স্পেসের একটা ছোট্ট রুম ভাড়া নিয়ে । এরপর অনলাইন ব্যাচ সাথে অনলাইন কোর্স । সব মিলিয়ে এখন Skilluper-এর ৪৫০০ জনেরও বেশি স্টুডেন্ট বাংলাদেশের জব মার্কেট সহ ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনে জিডিপিতে অবদান রাখছে ।

Skilluper অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ৬৮ টা জেলার গ্রামে বসবাসরত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জব মার্কেটমুখী শিক্ষা এবং ছাত্রাবস্থায় উপার্জনের ব্যবস্থা করতে কাজ করবে যাতে গ্রামের সাধারণ পরিবার গুলোর তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেয়ে না হয় ।

এছাড়াও এই মুহূর্তে যারা বাংলাদেশের  জব মার্কেটে কাজ করছে তাদের স্কিল ডেভেলপ করা পাশাপাশি দ্বিতীয় আর্নিং সোর্স তৈরিতে হেল্প করবে ।