একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক – একদিন একটি সুন্দরী মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে । পাশ থেকে একটি ছেলে দৌঁড়ে এসে মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো এবং বললো – ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি ‘ । এটা শোনা মাত্রই মেয়েটি বললো – দেখো আমার পেছনে আমার ছোট বোন আসছে, ও আমার থেকেও সুন্দরী । তৎক্ষণাৎ ছেলেটি পেছনে দৌড় দিলো এবং অনেক খোঁজাখুঁজি করে কাউকে না পেয়ে ছেলেটি আবার মেয়েটির সামনে এসে বললো – কই কাউকে পাইলাম না । তখন সুন্দরী মেয়েটি বললো – ‘ তুমি যদি আমাকেই ভালোবাসতে তাহলে স্বর্গের হুরের কথা বললেও তুমি তার পিছু ছুটতে না, তুমি আসলে ভালোবাসতেই জানো না ‘ ।
ফ্রিল্যান্সিং পেশার ক্ষেত্রে আমাদের বেলায়ও এখন ঠিক এমনটাই ঘটছে । আমরা বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে বিভিন্ন রকম স্ক্রিনশট দেখছি – অমুক মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপ করে ৫০,০০০ ডলার আর্নিং করছে, তাই আপনি মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শেখা শুরু করে দিলেন, তমুক ডিজিটাল মার্কেটিং করে মার্কেটপ্লেস থেকে ৪০,০০০ ডলার আর্নিং করছে, আপনিও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা শুরু করে দিলেন । কিন্তু একবারও ভাবলেন আদৌ এটা আপনার ভালো লাগে কিনা, আপনার সাথে যাই কিনা, আপনার প্যাশন আছে কিনা । ফলাফল কি হলো – কিছু দূর আগালেন, ডিমোটিভেট হলেন, তীরে নৌকা ভিড়ানোর আগেই অথৈ জলে পড়ে দিক-বিদিক, দিশেহারা, পাগলপারা সিন্দাবাদের মতো মাথা চাপড়াতে থাকলেন ।
ফ্রিল্যান্সিং সহ যেকোন পেশায় ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে আসলে আমাদেরকে স্পেসিফিক কোনো বিষয়ে যেমন স্কিলড হতে হবে তেমনি সেটা অবশ্যই আপনার ভালো লাগতে হবে, প্যাশন থাকতে হবে । নেশাকে পেশা বানাতে হবে এবং পেশা থেকে পেশাদারিত্বতে গুরুত্ব দিতে হবে ।
আপনাকে কালের হাওয়াই গা ভাসিয়ে যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারই হতে এমন কোনো কথা নেই । ভালোলাগা যেকোন কাজ করেই আপনি সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে পারবেন যদি প্যাশন থাকে । রকেট সাইন্স পড়ে রকেট বানাতে গিয়ে ফকির হওয়া থেকে স্যান্ডেল বানানো শিখে বাটা হওয়া অনেক ভালো, কি ভালো না ?
কফি বানাতে কখনো লবন লাগে না, তাই বলে কি লবন অচল মাল ? না ! এই একই লবন খাবার স্যালাইন বানাতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এবং পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করছে । জাকারবার্গ হয়ে ফেইসবুকই যে বানাতে হবে এমন কোনো কথা নেই – কেউ ফেইসবুকে বিজনেস করে সফল হচ্ছে, কেউ ফেইসবুক মার্কেটিং শিখে সার্ভিস দিয়ে সফল হচ্ছে, কেউ আবার ফেইসবুক ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে আর্নিং করছে সফল হচ্ছে ।
তাই কাজ যেটাই হোক না কেন ভালোবেসে নিপুনভাবে পেশাদারিত্বের সাথে করতে হবে ।
এবার আসল কথায় আসা যাক – এখনো কি আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড গ্রুপের ডলারের স্ক্রিনশট দেখবেন আর ঝাঁপিয়ে পড়বেন ওই কাজ শিখতে? না কখনোই না । আপনাকে আপনার ভালোলাগার বিষয় টা খুঁজে বের করতে হবে ।
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে ভালোলাগার বিষয় টা খুঁজে বের করবেন । খুব সহজ । জাস্ট ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে যান । বিভিন্ন ধরণের কাজের ক্যাটেগরি থেকে যেকোনো একটা বিষয় চুজ করুন এবং গুগলে সার্চ দিয়ে আর্টিকেল গুলো পড়তে থাকেন অথবা ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ভিডিও গুলো দেখতে থাকেন । এভাবে কিছু দিন দেখার পর অটোমেটিক স্পেসিফিক কোনো বিষয়ের প্রতি আপনার একটা ভালোলাগা তৈরী হবে, আপনার ভিতরে একটা কনফিডেন্স তৈরী হবে যে হ্যাঁ আপনি এটা পারবেন ।
তারপর ভালো কোনো মেন্টর দেখে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার ভালোলাগার বিষয়ের উপর কোর্স করে ফেলুন, প্রাকটিস করুন এবং মাঠে নেমে পড়ুন । মাঠে নেমেই যে গোল করতে পারবেন বিষয় টা এমন না । ধৈর্য ধরুন বেস্ট টা দিয়ে খেলতে থাকুন । এক সময় গোল হবেই । প্রথমআর্ধে গোল করতে না পেরে মাঠ থেকে উঠে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় । আপনাকে শেষ পর্যন্ত খেলতে হবে, বিজয়ের পতাকা আপনার হাতেই থাকবে ।
অতএব শেষ হাঁসিটা হাসতে হলে চিন্তা-ভাবনা করেই মাঠে নামতে হবে । আইনস্টাইনের একটি কথা আছে – “Imagination is more important than knowledge”.