কেন ৭০% Freelancer ফ্রিল্যান্সিং শুরুর প্রথম বছরেই ঝরে পড়ে ?

কেন ৭০% Freelancer ফ্রিল্যান্সিং শুরুর প্রথম বছরেই ঝরে পড়ে

ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় এবং সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার হিসেবে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় পেশা। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘরে বসেই কাজ করার সুযোগ থাকায়, ফ্রিল্যান্সিং অনেকের কাছেই পছন্দের পেশা হয়ে উঠেছে।

তবে, অনেক ফ্রিল্যান্সার শুরুতেই কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন এবং তাদের ক্যারিয়ার ব্যর্থ হতে পারে। কিছু পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৭০% ফ্রিল্যান্সার প্রথম বছরই ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেন। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সঠিক পরিকল্পনার অভাব, দক্ষতার ঘাটতি, এবং ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগের সমস্যা।

নিচে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্যর্থ হওয়ার ৫টি প্রধান কারণ ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. কিছু না বুঝেই এই সেক্টরে আসা:

সাধারণত দেখা যায় ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করা যায় এটা ভেবেই এই সেক্টরে চলে আসে। এবং আসার পর তারা না বুঝেই যেকোনো একটা বিষয়ে কোনো রকম দক্ষতা নিয়ে কাজে লেগে পড়ে। তারা একবারও চিন্তা করে না যে বিষয়টাতে দক্ষতা অর্জন করতে যাচ্ছে সেটা আদৌ তার সাথে যায় কিনা, পারবে কিনা, ওটাতে তার প্যাশন আছে কিনা ইত্যাদি। এরপর যখন মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করে কিন্তু কাজ পায় না তখন ছেড়ে দেয়।

এই সমস্যাটি ফ্রিল্যান্সিং এ নতুনদের মধ্যে খুব বেশি দেখা যায়। তারা মনে করে ফ্রিল্যান্সিং মানেই হলো সহজে অনেক টাকা আয় করা। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয়। ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে হলে দক্ষতা, পরিশ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।

সমাধান:

  • প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া
  • নিজের আগ্রহ এবং দক্ষতা অনুযায়ী কাজ নির্বাচন করা
  • নির্বাচিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য সময় দেওয়া
  • মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া

২.  দক্ষতার অভাব:

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে, আপনার নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকতে হবে। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা সব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চায় । কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে ১-২ টা বিষয়ে একদম এক্সপার্ট লেভেলের দক্ষতা অর্জন করতে হবেএবং রিলেভেন্ট বিষয় গুলোতে এভারেজ নলেজ রাখতে হবে । উদহারণ সরূপ কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুগল এডস বা ফেইসবুক গুগল এডস নিয়ে কাজ করতে চাই তাহলে তাকে কনটেন্ট মার্কেটিং, এসইও, ওয়েব এনালিটিক্স, সিআরও, ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে এভারেজ নলেজ থাকতে হবে । 

তাই আপনি যে কাজ করতে চান, সেই বিষয়ে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। শুধু কাজ পাওয়ার জন্য যা-তা দক্ষতা দেখালে, আপনি ভালো কাজ করতে পারবেন না এবং ক্লায়েন্টদের আস্থা হারাতে পারেন।

সমাধান:

  • আপনার দক্ষতা উন্নয়নে সময় দিন
  • অনলাইন কোর্স, টিউটোরিয়াল এবং বইয়ের সাহায্য নিন
  • বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ছোট প্রজেক্টে কাজ করুন

৩. যথেষ্ট সময় না দেওয়া:

ফ্রিল্যান্সিংকে অনেকেই “পার্ট-টাইম” কাজ মনে করেন, তবে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা। এখানে সফল হতে হলে, আপনাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কাজ খোঁজা, ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করা, কাজ সম্পন্ন করা – এই সবকিছুর জন্য সময় প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন অল্প সময় দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যাবে, তাহলে আপনি ভুল করছেন। কারণ ফ্রিল্যান্সিং মুক্তপেশা সেটা ঠিক আছে কিন্ত ক্লায়েন্টের কাজ আপনাকে যথা সময়ে ডেলিভারি দিতে হবে । 

সমাধান:

  • ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি করুন
  • প্রতিদিন কিছু সময় ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আলাদা করে রাখুন
  • কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন

৪. সঠিক মার্কেটিং ও আত্মবিশ্বাসের এর অভাব:

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ পেতে হলে, আপনাকে নিজের মার্কেটিং করতে হবে, যেটাকে আমরা বলি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার কথা ক্লায়েন্টদের জানাতে হবে। এর জন্য আপনাকে নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকতে হবে এবং বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফাইবার, আপওয়ার্ক, লেজিট ইত্যাদি) প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আপনি যদি নিজের মার্কেটিং করতে না পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে।

একই সাথে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে, আপনার আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। নিজের দক্ষতা এবং কাজের উপর আপনার বিশ্বাস থাকতে হবে। ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলার সময় বা কাজ করার সময় যদি আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তাহলে আপনি ভালো ফল পাবেন না।

সমাধান:

  • নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন এবং আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত আপনার কাজ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন
  • বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি করুন এবং বিড করুন
  • নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর বিশ্বাস রাখুন
  • ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বড় কাজ নিন
  • সফল ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিন

৫. ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের অভাব:

ফ্রিল্যান্সিংয়ে শুরুটা কঠিন হতে পারে। প্রথম কাজ পেতে বা ক্লায়েন্টদের আস্থা অর্জন করতে সময় লাগতে পারে। এই সময় আপনাকে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি সহজে হাল ছেড়ে দেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া কঠিন। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একদম হাল ছেড়ে দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কাজ পেয়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ঘুরে দাঁড়িয়েছে । 

সমাধান:

  • ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান
  • হতাশ না হয়ে নতুন সুযোগের সন্ধান করুন
  • নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিন এবং উন্নতি করার চেষ্টা করুন

এই ৫টি কারণ ছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে যা ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে, এই কারণগুলোর দিকে মনোযোগ দিলে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিলে, আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারবেন।

 

প্রথম আলোতে এই আর্টিকেলটি ছাপা হয়েছে ।  প্রথম আলো থেকে পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন : ফ্রিল‍্যান্সিং শুরু করেও ব্যর্থ হওয়ার ৫ কারণ | প্রথম আলো